ডায়াবেটিস রোগটি হয় মূলত রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ বা চিনি জমার কারণে। এই রোগটি শরীরে দীর্ঘস্থায়ী হলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তারমধ্যে অন্যতম হলো হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ এবং স্নায়ু ক্ষতি। অনেকের মাঝে ডায়াবেটিসের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। কিন্তু তবুও পরিক্ষা করলে দেখা যায় ডায়াবেটিস আছে।
ডায়াবেটিস এর লক্ষণ
সব থেকে ভালো হয়, যদি প্রতিমাসে অন্তত একবার ২০ টাকা খরচ করে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করানো যায়। তাছাড়া নিচের কিছু ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেওয়া হলো। এই লক্ষণ গুলো আপনার মধ্যে পাওয়া গেলে দ্রুত ডায়াবেটিস পরিক্ষা করে ওষুধ সেবন করতে হবে।
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
- প্রস্রাব অতিরিক্ত সাদা বা গন্ধযুক্ত হওয়া
- সব সময় পানির পিপাসা লাগা
- অকারণে ওজন কমে যাওয়া
- চোখে কম দেখা বা ধূসর দৃষ্টি
- অবসাদ এবং সব সময় ক্লান্তি অনুভব হওয়া
- শরীরের কাটা-ফাটা সারতে দেখি হওয়া
- নারী ও পুরুষের যৌন সমস্যা দেখা দেওয়া
- হাত-পায়ে ঝিঁঝিঁনি বা অসাড়তা দেখা দেওয়া
- চোখ ও মুখ জ্বালা-পোড়া করা
- অসময়ে মাথা ব্যথা করা
- পেশীতে টান এবং দুর্বলতা দেখা দেওয়া
উপরে যে ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলো বলা হয়েছে, এগুলো অন্যান্য রোগের কারণেও হতে পারে। তাই এই সমস্যা গুলা দেখা দিলে ২০ টাকা খরচ করে ডায়াবেটিসটা একটু পরিক্ষা করে নিবেন। কারণ, প্রতিকার থেকে প্রতিরোধ উত্তম।
ডায়াবেটিস এক নিরব ঘাতক রোগ। এই রোগটি হওয়ার সাথে সাথে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। কিন্তু দীর্ঘদিন শরীরে থাকার ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনি রোগ নষ্ট হওয়ার মত বড় সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া ডায়াবেটিস হলে শরীরে শক্তি থাকে না এবং শরীরের কোনো স্থান কেটে ফেটে গেলে তা সহজে ভালো হতে চায় না। তবে ডায়াবেটিসের একটি মাত্রা আছে, সে মাত্রাতিক্ত পার হয়েগেলেই এই ধরনের সমস্যা হয়।
ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ
ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ না। ডায়াবেটিস হলেই বিপদ। কারণ, ডায়াবেটিস মানে রক্তে চিনির মাত্রা বেশি আছে। তাছাড়া সবার রক্তে চিনির মাত্রা আছে এবং এই মাত্রা ৮০-১০০ mg থাকা মানে নিরাপদ। কিন্তু এই মাত্রা যদি ৮০-১০০ mg অতিক্রম করে, তাহলে সেটা ডায়াবেটিস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে ক্ষেত্র বিশেষে ৮০-১০০ mg এর উপরে উঠলেও নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয়।
খালি পেটে ডায়াবেটিস:
- স্বাভাবিক: ৮০-১০০ mg/dL
- প্রি-ডায়াবেটিস: ১০০-১২৫ mg/dL
- ডায়াবেটিস: ১২৬ mg/dL বা তার বেশি
খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ডায়াবেটিস:
- স্বাভাবিক: ১৪০ mg/dL
- প্রি-ডায়াবেটিস: ১৪০-১৯৯ mg/dL
- ডায়াবেটিস: ২০০ mg/dL বা তার বেশি
উপরের এই চার্টিও নিরাপদ ডায়াবেটিস হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু খাবার আগে যদি ডায়াবেটিস ১৮০ mg/dL হয় এবং খাওয়ার ২ ঘন্টা পর যদি ডায়াবেটিস ৩০০ mg/dL হয়। তাহলে বিপদ হিসেবে বিবেচিত হয়। এতে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে, অন্ধত্ব এবং স্নায়বিক ক্ষতি ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
ডায়াবেটিস একবার হলে সহজে তা নির্মূল করা যায় না। তবে যদি কিছু নিয়ম মেনে জীবন যাপন করা যায়। তাহলে ডায়াবেটিস কনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং আসতে আসতে নির্মূল হয়ে যায়। আর দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে ৩ টি উপায় অবলম্বন করতে হবে। নিচে ৩ টি উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ-
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনঃ- কিছু খাবার আছে যেগুলো ডায়াবেটিস হওয়ার অন্যতম কারণ। যেমনঃ- চিনি, মিষ্টি, ফাস্ট ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার। এগুলো খেলে আসতে আসতে ডায়াবেটিস হয়ে যায় এবং ইতিমধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রমণ রোগীদের ডায়াবেটিস আরো বৃদ্ধি পায়। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সর্বপ্রথম এই খাবার গুলো পরিত্যাগ করতে হবে।
ব্যায়াম করুনঃ- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যায়ামের জুড়িমেলা ভাড়। এজন্য ডাক্তার ডায়াবেটিসের রোগীদেরকে সর্বপ্রথম ব্যায়াম করার উপদেশ দেয়। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটাহাটি, দৌড়ানো-দৌড়ি, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো এবং আপনার অন্য কোনো ব্যায়াম যানা থাকলে তা করতে পারেন।
ওষুধ সেবনঃ- উপরের দুটি নিয়ম পালন করার পাশাপাশি নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করতে হবে। তাহলে দ্রুত ডায়াবেটিস নির্মুল হয়ে যায়। তবে হ্যাঁ, ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করলে ভাত কম খেতে হবে এবং আরো ভালো হয় যদি নিয়মিত নিমপাতার রস বা সাফি নামের সিরাপটি খেতে পারেন। কারণ, নিতা খাবার রক্ত পরিষ্কার করতে সক্ষম। আর ডায়াবেটিস হলো রক্ত বাহিত রোগ।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকার একটি লিস্ট করা খুবই জরুরি। কারণ, অনিয়মিত খাদ্যের মাধ্যমেই ডায়াবেটিস রোগটি সৃষ্টি হয় এবং নিয়ম মেনে খাবার খাওয়ার কারণেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খাবার বেছে খাওয়াটা অন্তত জরুরী। নিচে ডায়াবেটিস রোগীর খাবারের একটি লিস্ট দেওয়া হলো।
যা খেতে পারবেন:
- সব ধরনের সবুজ শাকসবজি, মিষ্টি আলু, ডাল (যেমন: মুগ ডাল, মসুর ডাল, ছোলা), আপেল, নাশপাতি, জাম্বুরা, আঙ্গুর, কমলা, লেবু, বেদানা, খেজুর (সীমিত পরিমাণে), মাছ, মুরগির মাংস (চামড়া ছাড়া), ডিম, দুগ্ধজাত দ্রব্য, বাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, জলপাই তেল, ক্যানোলা তেল, লাল চাল, লাল আটা, ওটমিল, ব্রাউন রাইস, ভুট্টা এবং ডেলি ইত্যাদি।
উপরের লিস্ট করা খাবার গুলো আপনি যত খুশি খেতে পারবেন কোনো সমস্যা নেই। কারণ, এগুলো সবই পুষ্টিকর খাবার এবং ডায়াবেটিস মুক্ত খাবার। এই খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে ডায়াবেটিস আরো নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
- চিকেন পক্স হলে করণীয় কি ? বিস্তারিত
- কোমরের ব্যথা কমানোর উপায়, মলম, ট্যাবলেট ও ব্যায়াম
- পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় কি ? স্বামীর করণীয় ?
- দাউদের সবচেয়ে ভালো ঔষধ ও মলম এর নাম
- ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়। বিস্তারিত আলোচনা
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
ডায়াবেটিস ভালো করতে চাইলে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, ওষুধ সেবন করতে হবে, খাবার বেছে বেছে খেতে হবে এবং কিছু খাবার আছে যেগুলো থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। না হলে ডায়াবেটিস কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না। নিচের ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা দেওয়া হয়েছে।
যা খেতে পারবেন না:
- চিনিযুক্ত কোন খাবার খেতে পারবেন না। এছাড়া সাদা ভাত, সাদা রুটি, পোলাও, পরোটা, নুডলস, ফাস্ট ফুড এবং ময়দার দিয়ে তৈরি খাবার যত সম্ভব কম খেতে হবে। গরুর ও খাসির লাল মাংস খাওয়া যাবে না। এগুলো শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তাছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন:- সসেজ, বেকন, স্যালামি এই খাবার গুলো যত সম্ভব কম খেতে হবে। একেবার না খেলে আরো ভালো হয়।