প্রতিমাসে হাজার হাজার মেয়েরা ” পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় কি ” এই শব্দটি লিখে গুগলে সার্চ করে থাকে। এথেকে এটায় বুঝা যাচ্ছে যে বর্তমানে বেশিরভাগ মেয়েরা এই যন্ত্রণাদায়ক রোগে আক্রমণ আছে। তবে অধিকাংশ মেয়েরা মনে করে পিরিয়ডের সময় ব্যথা হওয়া সাভাবিক বিষয়। হ্যাঁ, এটা সাভাবিক বিষয়। কিন্তু ব্যথা যদি প্রতিবার হয়, তাহলে বুঝবেন আপনি রোগে আক্রমণ হয়েছেন।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় কি ?
তেল মালিশ করুনঃ- পিরিয়ডের ব্যথা মূলত তলপেটে হয়ে থাকে। একটি গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে নারকেল বা তিলের তেলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং লিনোলিক অ্যাসিড থাকে। এগুলো মাংসপেশির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তাই পিরিয়ডের ব্যথা হলে সর্বপ্রথম নারকেল বা তিলের তেল পেটে মালিশ করে দিবেন। এতে যদি ভালো হয়ে যায়। তাহলে তো ভালো।
হিটিং প্যাড ছেকঃ- শরীরের কোনো স্থানে ব্যথা হলে এই হিটিং প্যাড ছেকটি জাদুর মত কাজ করে। তাই পিরিয়ডের ব্যথা উঠলে প্রথমে নারকেল বা তিলের তেল মালিশ করবেন। তারপর গরম পানি করে হিটিং প্যাডে ভোরে পেটে ছেক দিবেন। যদি আপনার পিরিয়ডের ব্যথাটা কোন রোগ না হয়। তাহলে ইনশাআল্লাহ এতেই আপনার ব্যথা ভালো হয়ে যাবে। হিটিং প্যাড যেকোনো ফার্মেসীতে পাওয়া যায়।
উপরের দুটি উপায় অবলম্বন করেও যদি আপনার পিরিয়ডের ব্যথা ভালো না হয়। তাহলে ঠান্ডা পানির ছেক দিবেন। প্রথমে একটি বোতলে পানি ভোরে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। বোতলটির পানি বরফ হয়েগেলে বোতলটি একটি পাতলা কাপড়ে পেচিয়ে পেটের যেস্থানে ব্যথা করছে সেস্থানে চেপে ধরুন। ইনশাআল্লাহ কয়েক মিনিটের মধ্যে আপনার ব্যথা কমে যাবে। তবে এতেও ভালো না হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধের নাম
অনেকের পিরিয়ডের সময় তলপেটে অতিরিক্ত ব্যথা হয়ে থাকে। যার ফলে তারা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন করে। আসলে পিরিয়ডের সময় কোন ব্যথা হয় না। তবে মাঝে মাঝে কোন কারণে সামান্য ব্যথা হতে পারে এটা সাভাবিক। কিন্তু নিয়মিত পিরিয়ডের সময় ব্যথা হলে এটা চিন্তার কারণ হতে পারে। এমনটা হলে ভালো একজন ডাক্তার দেখানো উচিত।
Algin ৫০ এমজিঃ- পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধের নাম হলো আলজিন ৫০ এমজি। এটা মেয়েদের পিরিয়ডের সময় তলপেটের ব্যথা ভালো করতে যাদুর মত কাজ করে। ওষুধ ১ টি করে দিনে তিন বেলা খেতে পারবেন এবং খাওয়া আগে বা পরে যেকোনো সময় খেতে পারবেন। পিরিয়ড ভালো হওয়ার আগ পর্যন্ত খেতে পারেন।
Naproxen:- নেপ্রোক্সেন মূলত একটি ব্যথানাশক ওষুধ। তবে এটা পিরিয়ডের ব্যথাও ভালো করতে সক্ষম। আপনি যেসকল ব্যথার জন্য এই নেপ্রোক্সেন ওষুধটি ব্যবহার করতে পারবেন। তাহলোঃ- পিরিয়ডের ব্যথা, তলপেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, যেকোনো মাংস পেশী ব্যথা এবং দাঁতের ব্যথা ইত্যাদি। পিরিয়ডের ব্যথার জন্য দিনে সর্বোচ্চ দুটি ওষুধ সেবন করতে পারবেন।
Acetaminophen:- অ্যাসিটামিনোফেন পিরিয়ডের ব্যথা ভালো করতে খুবই দুর্দান্ত কাজ করে। এটিও নেপ্রোক্সেন জাতীয় ওষুধ। তবে এধরনের ব্যথার ওষুধ অন্যান্য ব্যথার ওষুধের মত ক্ষতিকর না। তাই আপনার মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা ভালো করতে সকালে এবং রাতে দুবেলা অ্যাসিটামিনোফেন ওষুধটি সেবন করতে পারেন।
আপনার পিরিয়ডের ব্যথা যদি নিয়মিত হয়। তাহলে ভালো একজন গাইনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে। আর যদি মাঝে মাঝে পিরিয়ডের সময় ব্যথা হয়। তাহলে উপরের তিনটি ওষুধ থেকে যেকোনো একটি ওষুধ সকালে এবং রাতে একটি করে খেতে পারেন। তবে সব থেকে ভালো হয় ডাক্তারের পরামর্শ নিলে।
- চিকেন পক্স হলে করণীয় কি ? বিস্তারিত
- কোমরের ব্যথা কমানোর উপায়, মলম, ট্যাবলেট ও ব্যায়াম
- ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ ও নিয়ন্ত্রণ করার উপায়।
- দাউদের সবচেয়ে ভালো ঔষধ ও মলম এর নাম
- ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়। বিস্তারিত আলোচনা
পিরিয়ডের সময় টক খেলে কি হয় ?
পিরিয়ডের সময় টক খেলে কি হয় তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব না। কারণ, পিরিয়ডের সময় টক খেলে অনেকেই উপকার পায়। আবার অনেকের ক্ষতিও হয়। যেমন টক খেলে পেট খারাপ হয়, বমি বমি ভাব হয়, পেটে গ্যাস হয় এবং পেটে ব্যথা করে। তবে আপনার যদি টক খেলে এই সমস্যা গুলো না হয়। তাহলে পিরিয়ডের সময় বেশি করে টক খাবেন এতে অনেক উপকার পাবেন। যেমনঃ-
ব্যথা উপশমঃ- পিরিয়ডের সময় টক দই খেলে পিরিয়ডের ব্যথা কমে। কারণ, টক দইতে আছে প্রোবায়োটিক যা হজম ক্ষমতা উন্নত করে এবং পেটের ব্যথা ভালো করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
ফোলাভাব কমানোঃ- যেকোনো সময় টক খাবার খেলে পেটের সুস্থ ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য ঠিক থাকে। ফলে পেট ফোলাভাব কমে যায়। এছাড়াও শরীরের রক্ত পরিষ্কার হয়। বিশেষ করে পিরিয়ডের মেয়েদের জন্য টক অনেক উপকারী।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ- টক জাতীয় খাবারের মধ্যে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। যার ফলে নিরাপদ পিরিয়ড হয়।
পিরিয়ডের সময় টক খেলে উপকার ছাড়া ক্ষতি হয় না। কিন্তু আপনি যদি মনে করেন পিরিয়ডের সময় টক খাওয়ার ফলে আপনার উপকারের বদলে আরো ক্ষতি হচ্ছে। তাহলে টক খাওয়া বাদ দিবেন। কারণ, সব খাবার সবার পেটে সহ্য হয় না। যেমন কেউ আছে দুধ খেলে শক্তিশালী হয়, আবার কারো দুধ খেলে ডাইরিয় হয়।
পিরিয়ডের সময় স্বামীর করণীয়
মেয়ে হয়ে জন্মালে একদিন না একদিন এই পিরিয়ড শব্দটির সাথে পরিচয় হতে হবে। পিরিয়ড হলে নারীর শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এই সময় স্বামী কর্তব্য হলো স্ত্রীকে সঙ্গ দিয়ে তার সকল কাজে সাহায্য করা এবং স্ত্রীকে ওষুধ কিনে দিন, সব সময় তার কাছে থাকুন, সে যা খেতে চাই তাই এনে দেওয়ার চেষ্টা করুন এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে সাহায্য করুন।
কাজে সাহায্যঃ- মেয়েদের পিরিয়ড হলে তারা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শারীরিক অনেক সমস্যা দেখে দেয়। ফলে তাদের কাজে মন বসে না। এই সময় স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীর কাজে সাহায্য করা।
সহবাসঃ- পিরিয়ড হলে মেয়েরা সহবাস করার জন্য পাগল হয়ে যায়। কিন্তু এই সময়ে সহবাস করা ইসলাম ধর্মে হারাম এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানও নিষেধ করেছে। এই সময় সহবাস করলে স্ত্রীর ক্ষতি হয়। তাই স্বামীকে এই ব্যাপারে সতর্কতা থাকতে হবে।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নঃ- মেয়েদের পিরিয়ড হলে শরীর থেকে নাপাক রক্ত ভের হয়। আর এই সময় সেই স্থান দিয়ে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের সম্ভাবনা থাকে। তাই স্বামীর কর্তব্য হলো এই সময়ে স্ত্রীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কাজে সাহায্য করা।
কোন মেয়ের পিরিয়ড হলে তার স্বামীর এই কয়েকটি কাজ ভালোভাবে করা উচিত। আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন যে, স্ত্রীদের পিরিয়ডের সময় স্বামীর করণীয় কি ? এগুলো প্রতিটি স্বামী জানা জরুরি।
পিরিয়ডের কতদিন পর সহবাস করলে গর্ভবতী হয়
পিরিয়ডের কতদিন পর সহবাস করলে গর্ভবতী হয় এটা বলার আগে জানতে হবে আপনার বা আপনার স্ত্রীর পিরিয়ডের চক্র কত দিনের। তাছাড়া প্রত্যেকটি পুরুষ ও মহিলা একটি কথা মাথায় রাখবেন যে স্ত্রীর জরায়ুতে স্বামীর শুক্রাণু ৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এই ৫ দিনের মধ্যে যদি শুক্রাণু স্ত্রীর ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হতে পারলে বাচ্চা হয়ে যাবে।
তবে স্ত্রীর পিরিয়ড শুরু হওয়ার ৯ থেকে ১৯ দিনের মধ্যে সহবাস করলে বাচ্চা হয়। যেহেতু পিরিয়ড চলাকালিন সহবাস করা যায় না। তাই যদি বাচ্চা নিতে চান, তাহলে স্ত্রীর পিরিয়ড শেষ হওয়ার দিন বা পরদিন সহবাস করবেন। তাহলে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯% থাকবে ইনশাআল্লাহ। আশ করি বিষয়টি বুঝতে পারছেন।