কোমরের ব্যথা কমানোর উপায়। কোমর আমাদের দেহের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ । এক কথায় কোমর ছাড়া একটা মানুষ পুরোই অচল। কারণ, আমরা হাটা-চলা, কাজ-কর্ম এবং নড়া-চড়া সবকিছুই গোমরের উপর ভরদিয়ে করে থাকি। মেরুদণ্ডের নীচের অংশটি কোমর নামে পরিচিত। কোমরের সাথে রয়েছে কিডনি, লিভার, বিভিন্ন হাড়, স্নায়ু, পেশী এবং অন্যান্য টিস্যু। তাই কোমরে সমস্যা হলে এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কোমরের ব্যথা কেন হয় ?
অতিরিক্ত চাপঃ- হঠাৎ করে কোমরের উপর অতিরিক্ত চাপ দিলে কোমরে ব্যথা হতে পারে। এখানে অতিরিক্ত চাপ বলতে বোঝানো হয়েছে ভারি কোনো বস্তু মাথায় বা কোমরে করে বহন করা, দীর্ঘ সময় একই ভঙ্গিতে বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাক, দীর্ঘক্ষণ নিচে হয়ে থাকা এবং এমন কোনো অঙ্গ ভঙ্গি করা যার ফলে কোমরে চাপ পড়ে।
আঘাত প্রাপ্ত হওয়াঃ- যদি কোনো কারণে কোমরে আঘাত পান। তাহলে ভুলেও ওষুধ সেবন করবেন না। কারণ, আঘাতের কারণে কোমরে ব্যথা হলে সেই ব্যথা ভালো হয়ে গেলেও পরবর্তীতে কোনো না কোনো সময় আবার দেখা দেয়। তাই কোমরে আঘাত পেতে প্রাকৃতিক উপায়ে ব্যথা ভালো করবেন। যেমনঃ- মলম বা গরম পানির ছেক দিয়ে।
অতিরিক্ত ওজনঃ- অধিকাংশ মানুষই যানে যে অতিরিক্ত ওজনের কারণে কোমরের ব্যথা হয়। শরীরে ওজন বেড়ে গেলে ওজনের চাপটা কমোরের উপর পড়ে। তাই যাদের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি আছে তারা নিয়মিত ব্যায়াম করে চর্বি কমিয়া নিন। না হলে আসতে আসতে মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয় হতে শুরু করবে। ফলে অকালেই লাঠি ভর দিয়ে হাটা লাগবে।
উপরের এই তিনটি কারণ ছাড়া আপনার যদি আপনার কোমর ব্যাথা করে। তাহলে অবশ্যই একজন ভালো ডাক্তার দেখিয়ে পরিক্ষা নিরিক্ষা করে ওষুধ সেবন করবেন। কারণ, কোমর ব্যথা উপরের তিনটি কারণ ছাড়াও হয়, যদি কিডনি, লিভার এবং পাকস্থলীতে সমস্যা হয়। তাছাড়া কোমর ব্যথা একবার দেখা দিলে সারাজীবন এর এফেক্ট থেকেই যায়।
কোমরের ব্যথা কমানোর উপায়
আধুনিক জীবনযাপন, ভুল বসার ভঙ্গি এবং অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির কারণেই মূলত কোমরের ব্যথা দেখা দেয়। তবে এই ব্যথাকে সাধারণ ব্যথা বলে বিবেচনা করা হয়। য়বে ব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়। তবে এটা চিন্তার কারণ হতে পারে। তারপরও নিচের নিয়মে ঘরোয়া কিছু চিকিৎসা নিলেই কয়েক দিনের মধ্যে কোমরের ব্যথা ভালো হয়ে যাবে।
মুভ বা ব্যথার মলমঃ- এমন কোনো মানুষ নেই যে কিনা মুভ মলমের নাম শুনেনি। এটা যেকোনো ব্যথা নিমিষেই ভালো করতে সক্ষম। তাই সব থেকে ভালো হয় যদি কোমরে ব্যথা হওয়ার সাথে সাথে মুভ মলম কোমরে লাগিয়ে ভালো করে মালিশ করতে পারলে ব্যথা ভালো হয়ে যাবে। তবে আপনি চাইলে অন্য কোনো মলমও ব্যহার করতে পারেন। বাজারে অনেক ভালো ভালো ব্যাথার মলম পাওয়া যায়।
গরম পানির ছেকঃ- আমরা কম বেশি সবাই জানি যে ব্যথা যুক্ত স্থানে গরম পানির ছেক দিলে ব্যথা টেনে যায়। এই নিয়ম প্রাচীন কাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। তাই কোমর ব্যথা দেখা দিলে একটি পাত্রে গরম পানি নিয়ে, তাতে একটি গামছা ভিজিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে গামছা দিয়ে কোমরে গরম ছেক দিন। প্রতিবার ১০ মিনিট করে দিনের ৩ থেকে ৪ বার ছেক দিলে ইনশাআল্লাহ কোমর ব্যথা ভালো হয়ে যাবে।
ব্যায়াম করুনঃ- কোমরে ব্যথা হলে তা ভালো করার সব থেকে ভালো উপায় হলো ব্যয়াম। আপনি যত বড় ডাক্তারের কাছে যান না কেন। আপনাকে ওষুধ লিখে দেওয়ার পাশাপাশি কিছু ব্যয়ামা শিখিয়ে দিবে এবং এটাও বলবে যে ওষুধ না খেলে চলবে, কিন্তু ব্যয়াম না করলে ব্যথা ভালো হবে না। তাই প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট কোমরের ব্যায়াম করুন।
এই তিন নিয়মের যেকোনো একটা নিয়ম অনুসরণ করলে ইনশাআল্লাহ আপনার কোমরের ব্যথা ভালো হবেই হবে। আর কোমরের ব্যায়ামটা অবশ্যই করবেন। প্রথমে চিত হয়ে শুয়ে পা দুটি সোজা করে মাথা পর্যন্ত নিয়ে আসবেন। আবার নিচে নামিয়ে আবারও মাথা পর্যন্ত আনবেন। এইভাবে ব্যায়াম করবেন।
কোমরের ব্যথা কমানোর মলম
ক্যাপসাইসিন মলমঃ- কথায় আছে না যে কাটা দিয়ে কাটা তুলতে হয়। তেমনই ক্যাপসাইসিন মলম বাহিরের কাটা, আর ব্যথা হলো ভিতরের কাটা। শরীরের কোনো স্থানে ব্যথা হলে সেই স্থান লাল হয়ে যায়। কারণ, ব্যথার রং হলো লাল। আর এই মলমটি ব্যথার স্থানে লাগালে কিছুক্ষণ জ্বলে তারপর ব্যথা ভালো হয়ে যায়। কারণ, এই মলম মরিচের একটি উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তাই মলমটি ব্যবহার করলে প্রথমে ব্যথার উপর আর ব্যথা লাগে। তবে মলমটি অতন্ত্য ভালো।
মেন্থল মলমঃ- আগুন নেভাতে পানি লাগে। কারণ, আগুন হলো গরম, আর পানি হলো ঠান্ডা। ঠান্ডা ও গরম একে অপরের শত্রু। তাই দুটি জিনিস একত্রে মিলিত হলে সবকিছু ঠান্ডা হয়ে যায়। কারণ, গরমের থেকে ঠান্ডার ক্ষমতা বেশি। এই মলমটি ঠিক তেমন পানির মত। এই মলমটি ব্যবহার করার সাথে সাথে ব্যাথা কৃত স্থান নিমিশেই ঠান্ডা হয়ে যায় এবং ব্যথার সংবেদন কমে যায়।
টাইগার বাপ ও ঝান্ডু বামঃ- এই দুটি ব্যথার মলম যেকোনো দোকানে পাবেন। কারণ, এগুলো অনেক আগ থেকে সুনাম অর্জন করা ব্যথার মলম। দুটি মলমের যেকোনো একটি আপনার কোমরে লাগিয়ে ভালো করে মালিশ করে দিবেন এবং পারলে সাথে একটু গরম পানির ছেক দিবেন। ইনশাআল্লাহ আপনার ব্যাথা ভালো হয়ে যাবে।
তবে যদি এই মলম গুলো ৫ থেকে ৭ দিন ব্যবহারের পরও আপনার কোমরের ব্যথা ভালো না হয়। তাহলে অবশ্যই ভালো একজন হাড় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়্ব পরিক্ষা করে তারপর ওষুধ সেবন করবেন। এর আগে কখনো ব্যথার ওষুধ সেবন করবেন না। কারণ, ব্যথার ওষুধ খেলে কিডনি রোগ হয়।
- চিকেন পক্স হলে করণীয় কি ? বিস্তারিত
- ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ ও নিয়ন্ত্রণ করার উপায়।
- পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় কি ? স্বামীর করণীয় ?
- দাউদের সবচেয়ে ভালো ঔষধ ও মলম এর নাম
- ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়। বিস্তারিত আলোচনা
কোমরের ব্যথা কমানোর ট্যাবলেট
কোমরের ব্যথা কমানোর জন্য বাজারে অনেক ওষুধ পাওয়া যায়। তবে নিজে নিজে এসব ওষুধ কিনা খাওয়া একেবারেই ঠিক না। কারণ, ডাক্তারের কাছে গেলে তারা আপনার কোমর ব্যথা কারণ বের করে সেই অনুযায়ী ওষুধ দিবে। কিন্তু আপনি যদি বাজার থেকে ওষুধ কিনে খান সেটা হয়তো আপনার রোগের ওষুধ নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার ওষুধ খেয়ে কোনো লাভ হবে না।
Anaflex max 375: এটি একটি কোমর ব্যথা ওষুধ। অতিরিক্ত কাজে কারণে বা খেলা করতে গিয়ে ব্যথা পেলে বা অন্য কোনো আঘাতের কারণে ব্যথা পেলে এই ওষুধটি খুবি ভালো কাজ করে থাকে। এটা সকালে ১টা এবং রাতে ১ টা করে ৭ দিন খেতে হবে। সব থেকে ভালো হয় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেলে।
Myorel: কোমর ব্যথা আরো একটি ভালো ওষুধ। এই ওষুধটি খাওয়ার আগে আপনাকে একটি গ্যাসের ওষুধ খেয়ে নিতে হবে। কারণ, এই ধরনের ওষুধ খেলে পেটে গ্যাস হয়। ওষুধ দিনের ২ বার সকালে এবং রাতে খাওয়ার পর খেতে হবে। ১ সাপ্তাহ খাবেম্লন, তবে এর আগে কোমরের ব্যথা ভালো হয়েগেলে ওষুধটি খাওয়া বন্ধ করে দিবেন
যদি কোমর ব্যথার ওষুধ খেতেই হয়, তাহলে এই দুটি থেকে যেকোনো একটি খেতে পারেন। আমার পরামর্শ কোমর ব্যথা হলে আগে কোমরে ব্যথার মলম লাগিয়ে ভালো করে মালিশ করবেন এবং সাথে গরম পানির ছেক দিবেন। এতে কাজ না হলে পরে ওষুধের দিকে ধাবিত হবেন। কারণ, ব্যথার ওষুধ কিডনির ক্ষতি করে। আমি নিজেও এর শিকার হয়েছি।
কোমরের ব্যথা কমানোর উপায় ব্যায়াম
যারা কোমরের ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে ব্যায়ামকে বেছে নিয়েছেন তারা বুদ্ধিমান। কারণ, কোমর ব্যথার জন্য আপনি যতই ওষুধ খান নে কেন, ডাক্তার আপনাকে আগে কিছু ব্যায়াম শিখিয়ে দেবে। কারণ, কোমর ব্যথা ভালো করার একটায় উপায় আছে তাহলো ব্যায়াম করার পাশাপাশি ওষুধ সেবন করা। তাই নিচে কিছু কোমরের ব্যথা কমানোর উপায় ব্যায়াম দেওয়া হলো।
ব্যায়াম একঃ- প্রথমে সোজাভাবে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। তারপর পা দুটি মাথার দিকে ভাজ করে আনুন এবং দুই হাত কাধের উপর দিয়ে পা দুটি ধরুন। তারপর মাথাটা মাটি থেকে উপর দিকে উঠিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রাখুন। সোজা কথা উপুড় হয়ে শুয়ে মাথা এবং দুটি পা একত্র করার চেষ্টা করুন। এভাবে ৫ মিনিট ব্যায়াম করুন।
ব্যায়াম দুইঃ- প্রথমে চার হাত-পা মাটিতে লাগিয়ে সোজাভাবে চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। তারপর ডান পা উচু করে উপর দিকে উঠিয়ে ১০ সেকেন্ড রেখে নামিয়ে নিন। তারপর বাম পা সোজা করে উপর দিকে উঠিয়ে ১০ সেকেন্ড রেখে নামিয়ে নিন। তারপর দুই পা এক সাথে উপর দিকে উঠিয়ে ১০ সেকেন্ড রেখে নামিয়ে নিন। এভাবে ৫ মিনিট ব্যায়াম করুন।
এছাড়াও আরো অনেক ব্যায়াম আছে কোমর ব্যথা ভালো করার জন্য। কিন্তু আপনি এই দুটি ব্যায়াম নিয়মিত করতে পারলে ইনশাআল্লাহ আপনার কোমর ব্যথা ভালো হয়ে যাবে। তবে এই ব্যায়ামে যদি কোন ফলাফল না পান। তাহলে বুঝবেন আপনার কোমরে অন্যকোনো সমস্যা হয়েছে। তখন ভালো একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।