বর্তমানে প্রায় লোকের ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দেয়। যার অন্যতম কারণ হলো অতিরিক্ত খাদ্য অবভাস। তাই আজকে আমরা ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ গুলো কি ? তা নিয়ে আলোচনা করবো। যাতে যেকেউ সহজে বুঝতে পারে যে, তার ফ্যাটি লিভার রোগ আছে কিনা।
ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ
- খাবারে অরুচি আসে এবং হজম ক্ষমতা কমে যায়।
- খাবার খাওয়ার পর বা আগে বমি বমি ভাব হয়।
- হটাৎ করে পেট বেড়ে যায় বা পেট ফুলে যায়। অথবা পেটে অনেক চর্বি দেখা যায়।
- পেটের মাঝখানে চাপদিলে পেট ব্যথা করে।
- প্রসাব, চোখ ও শরীর হলুদ হয় বা হালকা হলুদ বর্ণের হয়ে যায়।
- জন্ডিস হওয়া।
- খাবার পরে পেট জ্বালা-পোড়া করে।
- সব সময় শরীর দুর্বল লাগবে, কোন কাজ করতে মন চাইবে না।
- হজম ক্ষমতে কমে যাবে বা মুখে রুচি থাকবে না।
- ঘন ঘন গ্যাস্টিকের সমস্যা দেখা দিবে।
- অনেক সময় পায়খানা পাতলা হয়।
- ওজন কমে যাবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেলেও ওজন বাড়বে না।
- কোমরের দুই সাইটে বেশি পরিমাণ চর্বি জমবে।
অনেক সময় লিভারে সমস্যা হলে কোন লক্ষণ দেখা দেয় না। তাই ছয় মাস অন্তত অন্তত রক্ত পরিক্ষা এবং লিভার আল্ট্রাসাউন্ড করতে হবে। এতে লিভারে কোন সমস্যা হলে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়বে এবং চিকিৎসা করলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা ৯০% পার্সেন্ট থাকবে। আর লক্ষণ দেখার পর চিকিৎসা করতে গেলে তখন বেশি ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে। তাই প্রতিকার থেকে প্রতিরোধ ভালো।
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পেতে আগে আপনাকে কিছু অবভাস ত্যাগ করতে হবে। যেমনঃ- ধুমপান, মদ্যপান এবং সকল অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় দ্রব্য পান করা যাবে না, অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এবং অতিরিক্ত ফ্যাট যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। এই খাবার গুলো ফ্যাটি লিভার রোগের প্রধান কারণ। তাই আগে এগুলো ত্যাগ করে পরে নিচের নিয়ম গুলি মেনে চলতে হবে।
পেটের চর্বি কমানঃ- পেটে চর্বি জমা ফ্যাটি লিভারের একটি বড় কারণ। তাই যাদের পেট অতিরিক্ত বেড়ে গেছে তারা নিয়মিত অন্তত ১০ মিনিট সীটআপ ব্যায়াম করবেন। তাহলে ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে ফ্যাটি লিভার অনেকটায় কমে যায়। এছাড়া আপনার যদি পেটের চর্বি কমানোর অন্য কোন উপায় জানা থাকে, তাহলে সে পদ্ধতিও অবলম্বন করতে পারেন। মূল উদ্দেশ্য হলো যেকোনো ভাবে পেটের চর্বি কমাতে হবে।
কারমিনা সিরাপ খানঃ- কারমিনা একটি আয়ুর্বেদ লিভার রোগের কার্যকরী একটি ওষুধ। এই ওষুধের কোন সাইড এফেক্ট পাওয়া যায় নি। যাদের ফ্যাটি লিভার, জন্ডিস এবং লিভার সিরোসিস রোগ আছে, তারা এই কারমিনা সিরাপটি খেতে পারেন। প্রাপ্তবয়স্ক ২ চা চামচ করে দিনের দুইবার এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১ চা চামচ করে দিনের ২ বার সেবন করবেন। ১ থেকে ২ ফাইল খেলে ভালো ফলাফল পাবেন।
উপরিউক্ত বদ অবভাস গুলো পরিত্যাগ করে নিয়মিত ব্যায়াম এবং কারমিনা সিরাপ সেবন করবেন। সাথে কিছু পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। যেমনঃ- শসা, ফল-মূল সবুজ শাক-সবজি ইত্যাদি। তবে সব থেকে ভালো হয় ভালো কোন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পরিক্ষা করে ওষুধ সেবন করা।
- পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় কি ? স্বামীর করণীয় ?
- দাউদের সবচেয়ে ভালো ঔষধ ও মলম এর নাম
- ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়। বিস্তারিত আলোচনা
ফ্যাটি লিভারের ঔষধ
ডাক্তার না দেখি বা পরিক্ষা-নিরিক্ষা না করে ফ্যাটি লিভারের ঔষধ না খাওয়ায় উত্তম। তবে কিছু হোমিওপ্যাথি ওষুধ আছে যেগুলো লক্ষণ বুঝে খাওয়া যেতে পারে। তবুও যেহেতু লিভারেরে রোগটি অনেক জটিল, তাই অভিজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়ে ফ্যাটি লিভারের ঔষধ খেলে দ্রুত ফলাফল পাবেন। নিচের কিছু সাইড এফেক্ট মুক্ত ফ্যাটি লিভারের হোমিওপ্যাথি ঔষধের নাম দেওয়া হলোঃ-
চেলিডোনিয়ামঃ- শরীরে ফ্যাটি লিভার রোগের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে “চেলিডোনিয়াম” হোমিওপ্যাথি ওষুধটি খেতে পারেন। যদি আপনার ফ্যাটি লিভার রোগ নাও হয়, তাহলেও আপনি এই ওষুধটি খেতে পারবেন। এই ওষুধের কোন সাইড এফেক্ট এখনো দেখা যায় নি।
নাক্সভোমিকাঃ- অনেক ফ্যাটি লিভারের রোগীর খাবার খাওয়ার পর অনেক পেট ব্যথা করে। সেসকল রোগীদের ক্ষেত্রে “নাক্সভোমিকা” ওষুধটি খুবই কার্যকর। এছাড়াও ফ্যাটি লিভারের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলেও এই ওষুধটি সেবন করা যাবে।
ফসফরাসঃ- ফ্যাটি লিভার রোগের অনেক লক্ষণ আছে। তারমধ্যে শরীর দুর্বল, পেটে ব্যথা এবং টক ঢেকুর আশা ইত্যাদি সমস্যার রোগীরা এই ওষুধটি সেবন করলে ভালো ফলাফল পাবেন।
আমার মতে সব থেকে ভালো হয় কোন হোমিওপ্যাথি বা অ্যাআলোপ্যাথিক ডাক্তার দেখিয়ে পরিক্ষা করে তারপর ওষুধ সেবন করা। তবে হ্যাঁ, ফ্যাটি লিভার হলে উপরের বর্ণিত খাবার গুলো বর্জন করতে হবে এবং কিছু ব্যায়াম ও পুষ্টিকর খাবার খেলে ফ্যাটি লিভার মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
- চিকেন পক্স হলে করণীয় কি ? বিস্তারিত
- কোমরের ব্যথা কমানোর উপায়, মলম, ট্যাবলেট ও ব্যায়াম
- ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ ও নিয়ন্ত্রণ করার উপায়।
ফ্যাটি লিভারের ব্যায়াম
ফ্যাটি লিভার মানে লিভারে চর্বি জমা। শরীরে সাভাবিকের তুলনায় যখন বেশি চর্বি জমে, তখন লিভারের উপর দিয়ে চর্বির স্থার পড়ে যায়। যখন চর্বি পুরো লিভারকে ঘিরে ফেলে, তখন লিভার কাজ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। আর একেই ফ্যাটি লিভার নামে অবহিত করা হয়। তবে কিছু ঘরোয়া ব্যায়াম আছে যেগুলো নিয়মিত করলে শরীর ও লিভারের চর্বি দূর করা সম্ভব। তাহলোঃ-
প্রথম ব্যায়ামঃ- প্রথমে চিত হয়ে লম্বালম্বি শুয়ে পড়ুন। তারপর দুহাত দিয়ে ঘাড় ধরুন। অতপর কোমরের উপর ভর দিয়ে পুরোপুরি উঠে বসুন এবং আবার শুয়ে পড়ুন। এভাবে টানা ১৫ টা সীটআপ দিন। তারপর ২ মিনিট রেস্ট নিয়ে আবার ১৫ টা সীটআপ দিন। তারপর ২ মিনিট রেস্ট নিয়ে আবার ১৫ টা সীটআপ দিন। এভাবে ৩ বার করুন। এই ব্যায়ামটি টানা ১ মাস করতে পারলে অনেক্টায় ফ্যাটি লিভার ভালো হয়ে যাবে।
দ্বিতীয় ব্যায়ামঃ- প্রথমে চিত হয়ে লম্বালম্বি শুয়ে পড়ুন। তারপর দুহাত মাটিতে লম্বা করে রাখুন। তারপর কোমর থেকে দুই পা সোজা করে উচু করুন এবং পা দুটি লম্বালম্বি উচু করে মাথার দিকে যতটা সম্ভব ঝুকিয়ে আনুন। তারপর এভাবে ১ মিনিট ধরে রাখুন। তারপর আবার পা নামিয়ে আবার উঠান। এভাবে ১০ থেকে ২০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে।
তৃতীয় ব্যায়ামঃ- প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট দড়ি লাপ খেলুন। এটা এমন একটি ব্যায়াম যার মাধ্যমে লিভারের চর্বি থেকে শুরু করে শরীরে যেকোনো স্থানে বাড়তি চর্বি ঝরে ফেলানো সম্ভব। তাছাড়া অন্যান্য ব্যায়ামের থেকে এই ব্যায়ামটির অনেক উপকারিতা রয়েছে।
আমি আশাবাদী যে, আপনি যদি উপরের এই ৩টির যেকোনো একটি ব্যায়াম নিয়মিত ১ থেকে ২ মাস করতে পারেন। তাহলে আপনার শরীরে বড় কোন রোগ হবে না এবং শরীরের বার্ড়তি চর্বি ও লিভারের চর্বির সমস্যা ভালো হয়ে যাবে। কারণ, ব্যায়ামের উপর কোন ভালো ওষুধ নেই। মেক্সিমাম প্রাক্টিস মেক এ ম্যান পার্ফেক্ট।